গাজা: গাজার অন্যতম বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জন ড. আল-বুরশের মৃত্যুর নির্মম কাহিনী প্রকাশ্যে এসেছে। ইসরায়েলের একটি কারাগারে কয়েক মাস ধরে আটক থাকার পর তিনি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যান বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডিসেম্বর মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী “জাতীয় নিরাপত্তা”র অজুহাতে ড. আল-বুরশকে গ্রেফতার করেছিল। তাকে ও তার সহকর্মীদের আটক করার পর, এপ্রিল মাসে তাকে ওফার কারাগারের প্রাঙ্গণে অর্ধ-উলঙ্গ অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয়। তার শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল এবং তিনি দাঁড়াতে পারছিলেন না। পরে সহবন্দিরা তাকে একটি ঘরে নিয়ে গেলে তিনি সেখানেই মারা যান।
ড. আল-বুরশের জীবন ও কাজ
ড. আল-বুরশ শুধু একজন চিকিৎসকই ছিলেন না, তিনি একটি চেনা মুখ ছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে তার ভিডিও ডায়েরিগুলো গাজার সংকটময় পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরত। তার ভিডিওগুলোতে দেখা যেত, সীমিত সরঞ্জাম ব্যবহার করে আহত রোগীদের চিকিৎসা করছেন, গণকবর খুঁড়ছেন, এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করছেন।
অক্টোবর ২০২৩ সালে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ড. আল-বুরশ সহ অন্তত ৩১০ জন চিকিৎসাকর্মীকে ইসরায়েল আটক করেছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
কারাগারে ‘নরক’ যন্ত্রণা
ইসরায়েলের কারাগারে আটক থাকা বন্দিদের উপর নির্যাতন ও অত্যাচারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা বিটসেলেমের মতে, এই কারাগারগুলো “নরকের মতো”। আটককৃত চিকিৎসাকর্মীরা জানান, তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। বরং তাদের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মিলেনা আনসারি বলেন, “বন্দিরা গুরুতর শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। পুরুষ বন্দিদের মাথা, কাঁধ এবং শরীরের নিচের অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।”
মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন
জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতমার বেন-গভিরের নেতৃত্বে বন্দিদের প্রতি নির্যাতন আরও বেড়েছে। বেন-গভির প্রকাশ্যে বন্দিদের উপর অত্যাচারের পক্ষে কথা বলেছেন।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই নির্যাতনের নিন্দা জানিয়েছে। তবে গাজার চিকিৎসকদের উপর নির্যাতন ও তাদের দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনাগুলো গাজার মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে।
এই প্রতিবেদনটি ইসরায়েলের কারাগার ব্যবস্থার নৃশংসতার দিকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।